দৈনিক এই আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের আসবাপত্র বিক্রি ও অনিয়মের অভিযোগ’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ
চরখাটামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুস সামাদ মোল্লার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ প্রকাশ করা হয়েছে তা পুরোটাই মিথ্যা এবং বানোয়াট উল্লেখ করে প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও এলাকার মানুষ। জনাব আব্দুস সামাদ পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ করে তাঁর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন। যা উল্লেখ করা হলো-
মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন অভিযোগের প্রতিবাদ
গত কয়েকদিন হতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এবং একটি অনলাইন পত্রিকায় আমার বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ ছড়ানো হচ্ছে। আমি এসব অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন, বানোয়াট, হাস্যকর ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি কয়েকদিন ধরে মহান আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে অত্যন্ত ধৈর্য ধারন করেছি। আমি প্রথমতঃ এসব অভিযোগের প্রতিবাদ করতে চাইনি। কিন্তু ফেসবুকে এমন খবর দেখে আমার সকল আত্বীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী এবং শুভাকাঙ্খী আমাকে মোবাইল করে মূল ঘটনা জানতে পেয়ে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগের জন্য অত্যন্ত দুঃখ ও সমবেদনা প্রকাশ করেছেন। তারা এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্য বার বার অনুরোধ জানান। আমি যখন গভীরভাবে অনুধাবন করতে পারলাম যে, আমার এ ঘটনার প্রতিবাদ না করায় তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ও কষ্ট পাচ্ছে তখন আমি এ মিথ্যা অভিযোগের সংক্ষিপ্ত প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
মূলতঃ যারা এসব অভিযোগ ছড়াচ্ছে তাদের দু’এক জন বাদে সকলে আমার ছাত্র ছিল। তারা আমাকে শ্রদ্ধা ও সম্মান করে। আমার সামনা সামনি হলে যেভাবে শিক্ষককে সম্মান করতে হয় তারা তাই করে। এজন্য আমি তাদেরকে স্নেহ করি এবং আন্তরিকভাবে দোয়া করি। বিভিন্ন কারণে তারা উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি। আমার জানামতে আমার বিরুদ্ধে প্রকাশিত মিথ্যা অভিযোগের ভাষা, প্রকাশ ভঙ্গি ও কলা কৌশল তাদের কারো জানা নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস চরখাটামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে ঘিরে এ ধরনের অভিযোগ তারা করেননি। তারা কারো দ্বারা প্ররোচিত হয়ে আমার বিদ্যালয়ের পার্শ্বে অবস্থিত চরখাটামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে আলোচ্য অভিযোগের অবতারণা করেছে। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি ২০১১ সালে সরকারি নিয়ম কানুন মেনেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং শত বাঁধা ও প্রতিকুল পরিবেশেও সুনামের সাথে পরিচালিত হয়ে আসছে। বিদ্যালয়টি এখনও এমপিওভূক্ত হয়নি। বেতন ছাড়া একটি স্কুল পরিচালনা এক কঠিন ও দুসাধ্য কাজ। আল্লাহর মেহেরবানীতে স্কুলটি ভালোভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। বর্ণিত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কিছু স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষকের কেউ কেউ যারা পরবর্তীতে এনটিআরসিএ নির্ধারিত কাম্য শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি তাদেরকে কমিটি বাদ দেওয়ায় তারাই পর্দার অন্তরালে থেকে চরখাটামারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক সদস্যদের দ্বারা এসব মিথ্যা অভিযোগ অপবাদ দিতে উৎসাহিত করছে। আমি চরখাটামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা পরিবারের একজন হওয়ায় তারা তাদের শিক্ষাগত অযোগ্যতার কারণে চাকুরী করতে না পেয়ে আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিভিন্নভাবে আমাকে সমাজে হেয় করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও তাদের কারো সাথে আমার পারিবারিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক বা ব্যক্তিগত কোন দ্বন্দ্ব নেই। তারা আমার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্য। তারা তৃতীয় কোন পক্ষের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কুপরামর্শে ও ইন্ধনে এ ধরনের অভিযোগ করার প্রয়াস পেয়েছে। যারা তাদেরকে এ ধরনের হীন কাজে উদ্বুদ্ধ করেছে তারা আমার বিরুদ্ধে কয়েক বছর পূর্বেও চরখাটামারী নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে কেন্দ্র করে ঠিক একইরুপ অভিযোগ করেছিল। উক্ত অভিযোগের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক তদন্ত করে অভিযোগের কোন সত্যতা পাননি। অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে প্রমাণিত হয়েছে। যার ফলে অভিযোগকারীরা হতাশ ও ব্যর্থ হয়েছে। এটি আমার জীবনে আল্লাহর তরফ থেকে প্রত্যক্ষ সাহায্য বলে আমি বিশ্বাস করি। আমি এর জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি।
পূর্বের কমিটি’র কতিপয় সদস্য যে সমস্ত মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে অভিযোগ করেছিল ঠিক সেইসব কাগজপত্রের ফটোকপি দিয়ে আলোচ্য অভিযোগ দাখিল করেছে। এ থেকে পরিস্কার হয়েছে যে, কারা এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছে। আমি সকলের জ্ঞাতার্থে জানাতে চাই যে, বর্তমান ও পূর্বের কমিটির নির্বাচিত অভিভাবক সদস্যদের কেউ কেউ এ ধরনের অভিযোগের সাথে জড়িত আছেন।
আমার বিদ্যালয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে রুটিন মেরামত খাতে বরাদ্দকৃত ৪০,০০০/- (চল্লিশ হাজার) টাকার লামছাম কাজ করে বাকী অর্থ অভিযোগকারীরা ভাগবাটোয়ারার অবৈধ প্রস্তাব দিলে আমি তা সরাসরি নাকচ করে দিয়ে সম্পূর্ণ টাকা তাদের দ্বারাই মেরামত সামগ্রী ক্রয় করে মেরামত কাজ সম্পন্ন করি। উক্ত কাজ করতে তারা প্রায় ৩,৩০০/- টাকা আত্মসাৎ করে, যা আমার ব্যক্তিগত টাকা দিয়ে সমন্বয় করা হয়। এই টাকা ফেরৎ চাওয়ায় কমিটির অন্যান্য সদস্যদের সাথে তাদের বাকবিতন্ডা হয়। এরই জের ধরে তারা কমিটির সদস্যদের কিছু করতে না পেরে আমার বিরুদ্ধে এ ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দাখিল করেছে, শুধমাত্র আমাকে সমাজে, কোমলমতি ছাত্রছাত্রী, সহকর্মী এবং শুভাকাংখীদের নিকট হেয় করার জন্য।
অভিযোগকারীরা বিদ্যালয়ের নামে সরকারী ও বেসরকারী লক্ষ লক্ষ টাকা বরাদ্দের কথা উল্লেখ করেছে যা সম্পূর্ণ হাস্যকর। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ ধরনের অভিযোগ দেখলে বুঝতে পারেন অভিযোগ কারা করেছেন এবং কি কারণে করেছেন। কি কাজে কোথা থেকে টাকা বরাদ্দ হয়েছে তার কোন প্রমাণ নাই। মূলতঃ প্রতিষ্ঠানে কোন অর্থ তা লাখ লাখ হোক আর কোটি কোটি হোক বরাদ্দ হলে তা সরকারী টেন্ডারের মাধ্যমে ঠিকাদারের দ্বারা কাজ সম্পন্ন করা হয়। সেখানে কারো করার কিছু থাকে না। সেখানে একজন শিক্ষক কিভাবে টাকা আত্বসাৎ করতে পারে তা আমার বোধগম্য নয়। বিদ্যালয়ে ক্লাশ না নিয়ে বাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগটা একেবারে একটা অদ্ভুদ ধরনের অভিযোগ। এ যদি সত্যই হতো তবে তো সর্বপ্রথম আমার সহকর্মীগণ ও ছাত্রছাত্রীগণই অভিযোগ করতেন। আমার ক্লাশ করার বিষয়টি আমার সহকর্মী, ছাত্রছাত্রী ও উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই খুব ভালো করে জানেন। বিদ্যালয়ের জমিতে বিদ্যালয় অবস্থিত, অন্যকোন প্রতিষ্ঠান এতে নাই। কথার কথা যদি থেকেই থাকে তবে তো তা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্যের অবৈধ বাড়ীঘর বা স্থাপনা নয়। নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নিয়মিত ম্যানেজিং কমিটি রয়েছে, তারাই সেখানকার দেখভাল করে। সেখানে আমাকে জড়ানো উদ্দেশ্য প্রণোদিত ছাড়া কিছু নয়। যেখানে এনটিআরসিএ’র মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ হয়ে থাকে, সেখানে শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্বসাৎ করার অভিযোগ মিথ্যা, ভিত্তিহীন।
আমি পূর্বেই বলেছি যারা অভিযোগ করেছে তারা এটা না জেনে না বুঝে শুধু কিছু কুচক্রী ও স্বার্থান্বেষী মহলের ইন্ধনে আমাকে সমাজে হেয় করার উদ্দেশ্যেই করেছে। একজন নিরপরাধ মানুষের নামে তথ্য প্রমাণ ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটানো, অভিযোগ দায়ের করা গুরুতর শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তারা হয়তো সেটা জানে না। যেহেতু তাদের কেউ কেউ আমার ছাত্র এবং সবাই কম বয়সী এজন্য তাদের এহেন অপরাধের কারণে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নিতে চাই না। আমি তাদের জন্য দোয়া করি তারা তাদের কৃত ভুল বুঝতে পারুক এবং তাদেরকে কুপরামর্শদানকারীদেরকে চিনতে পারুক। আমি মহান আল্লাহর কাছে ধৈর্য ধারনের সাহায্য চাচ্ছি। আল্লাহ যেন আমাকে সকল অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে অটল থাকার এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করেন।
আব্দুস সামাদ মোল্লা
প্রধান শিক্ষক
চরখাটামারী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়
Average Rating
বিস্তারিত পড়ুন...
পীরগঞ্জে কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে গায়েবী জানাজা
রাণীশংকৈলে জাতীয় পার্টির দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত।
পল্লী বিদ্যুতের অনিয়ম দুর্নীতি ও কর্মচারি- কর্মকর্তাদের দাবি বাস্তবায়নে কর্মবিরতী